শনিবার, ৮ মে, ২০২১

রোমান্টিক সমগ্র ১


 অজান্তেই আলাপ


দিনটি ছিল বর্ষার। সেই সকাল থেকে বৃষ্টি হয়ে চলেছে। সকালে একটু পড়তে বসেও মনটা ঠিক লাগলো না। কি আর করা যায় ভালো না লাগলে একটি পথ যে আছে, ইন্টারনেট অন করে ফেসবুক করা ছাড়া আর কাজ কী? ফেসবুক অন করে দেখি একটি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট কিন্তু এটা আবার কে চিনি না তো। আচ্ছা যেই হোক রিকোয়েস্টটা একসেপ্টই করি। কিছুক্ষণ পর মনে হলো একটু কথা বলে দেখিই না? মেসেঞ্জারে গিয়ে লিখলাম আপনি কে আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না, আপনি কি আমাকে চেনেন? দু'ঘণ্টা পর দেখি রিপ্লাই এসেছে যে সেও আমাকে চেনে না এবং সেও বুঝতে পারছে না কি ভাবে তার থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এসেছে হয়তো অজান্তেই হাত লেগে গিয়ে। এবং সেও তার ঠিক পরমুহুর্তে বলে আপনি কিছু মনে করবেন না ভুল করে এটি হয়ে গেছে। আমি বললাম ঠিক আছে এতে আবার ভুলের কি? এই বলে ফেসবুক অফ করে দিলাম। পুনরায় আবার যখন ফেসবুক অন করেছিলাম দেখতে পাই যে সে লিখেছিল আপনি চাইলে আনফ্রেন্ড করে দিতে পারেন।


কিন্তু কেন জানি না ওই অজান্তে আগত পাগলটা অর্থাৎ ওই অর্ঘ্যকে খুব স্পষ্ট কথায় আলাদা করতে আমার বেশি সময় লাগেনি। good sense of humour অর্ঘ্য আমার মনে একটি আলাদা জায়গা করে নিয়েছিল। ও তখন ইঞ্জিনিয়ারিং এ থার্ড ইয়ার পড়ছে আর আমি সবে মাত্র ইলেভেনে পড়ি। বলতে গেলে আমার বড়ো দাদাই।


প্রথম প্রথম একটু আকটু কথা হতো কিন্তু তা থেকে থেকে দীর্ঘ পর্যায়ে পৌঁছেছিল। ও আবার মাঝে মাঝে আমাকে বলতো সবে ইলেভেনে পড়ো এখন থেকেই ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ এসব করা শুরু করে দিয়েছো। আমি আবার তখন বলতাম তাহলে তুমি করো কেন? তখন আর কিছু বলতে পারত না। এইভাবে আমাদের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ এর বিভিন্ন কথা চলতো। জানিনা কেন, এই ভাবেই আমার ওকে খুব ভালো লাগতে শুরু করে। ফেসবুক অন করে মনে হতো যে ও কখন অন আছে এবং অন না থাকলে মনে হতো কি এমন এত কাজ করছে। তারপর যখনই অন্ হতো আমি একটু রেগে যেতাম। ও তখন বলতো আমার জন্য তুমি রেগে যাচ্ছ কে হই আমি তোমার? তখন আমার মন খারাপ হয়ে যেত, আর সেটা ও যেন কিভাবে বুঝতেও পেরে যেত আর আমাকে বলত আচ্ছা বাবু সরি সরি আর কখন ও হবে না এই আমার কান ধরলাম।


এইভাবে সুখ দুঃখের মাঝে রাস্তা করে নিয়ে আমাদের দিন অতিবাহিত হচ্ছিল। কিন্তু আমি কখনও ওকে বলতে পারিনি যে আমি ওকে সত্যি খুব আপন করে ফেলেছি যেন নিজের থেকেও বেশি। কেন জানিনা ও যেন বড় দাদার মতো দাদাই হয়ে থাকতো। এইভাবে দিন এগোচ্ছিল -


প্রায় তিন বছর পর.....


আমি তখন বাংলাতে অনার্স নিয়েছি সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছি আর ও কি একটা চাকরি পেয়েছে। এবার যেন ওর কথাগুলো একটু গম্ভীর গম্ভীর বড্ড ব্যস্ত যেন কিছু জিজ্ঞাসা করলে যেন ঠিক করে বলেও না আর। বুঝতে পারি বড্ড কাজের চাপ তাই। আর আমি তো সেই যেমন ছিলাম তেমনই, কি আর বলবো। মাঝে মাঝে রাগ হতো মেসেজ সিন করেও রিপ্লাই দিত না, মনে হতো কোনো মিটিংয়ে আছে হয়তো। আমি আর কিছু বলতাম না। এইভাবে যেন বলেও না বলার মত চলছিল।


মাঝে মাঝে মনে হতো এবার বলেই দি ধুর আর ভালো লাগেনা। না থাক কি ভাববে ও! এই করে করে আর বলাও হয়ে ওঠেনি। এইভাবে কাটছিল।


দিনটি ছিল বুধবার যততা সম্ভব মনে পরে সেদিন বনধ ছিল তাই অন্যান্য ছুটির দিনগুলির মত দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা। ওই নটার দিকে উঠে মেসেঞ্জারটা খুলে দেখি দুটো ম্যাসেজ কার না, অর্ঘ্যর, ও আবার মেসেজ করেছে হ্যাঁ ঠিক, তাইতো।


আচ্ছা বোন 10 তারিখ আমার বিয়ে হঠাৎ করে ঠিক হয়ে গেল, আর বাবারও বয়স হয়েছে তাই তুমি ওইদিন অবশ্যই এসো, আমি তোমার অপেক্ষায় থাকলাম কিন্তু! আর বিয়ের কার্ডটাও পাঠিয়ে দিয়েছি।


কথাগুলো শুনে আমি যেন কেমন স্তব্ধ হয়ে গেলাম, নিজেকেও জানো কেমন অজানা অজানা মনে হল সত্যিই কি আমি সেই মেয়ে, যে ওকে প্রানের চেয়েও বেশী ভালোবাসতো।


আমার কেন এমন মনে হচ্ছে আমি কে হই ওর, আমি তো কেউ না ওর, তাহলে আমার কেন এত কষ্ট হচ্ছে। সত্যি আমি কেউ না সত্যিই না, না। মনে মনে নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছিল মনে হচ্ছিল সমস্ত মেসেজ ডিলিট করে দি। মনে হচ্ছিল কেন এতদিন আমি এত সময় নষ্ট করলাম পড়া আছে না, আমি তো ছেলেদেরও বাংলা পড়াই, তাদের পড়াতে হবে না। যেন নিজেই নিজের চোখের জলকে প্রবাহের পথ দেখিয়েছি তাই হয়তো সে প্রবাহিত হচ্ছে।


অর্ঘ্য আবার বলল তুমি আসবেনা, আমি তাহলে কিন্তু খুব কষ্ট পাব, আমি তখন অশ্রুপাতে নিমজ্জিত অবস্থায় যার এক ফোটা অশ্রু হয়তো ওর শব্দ স্পর্শ করেছিল। আর আমি যেন অজান্তেই বলে ফেলি আচ্ছা দাদা যাব চিন্তা করো না। অর্ঘ্য বলে এইতো আমার প্রিয় বোন। জানি আমার সম্পর্কটি বোনেই সীমাবদ্ধ।


আর কেন জানিনা নিজে থেকেই বুঝতে পেরেছিলাম সবাই সবার জন্য হয়না, হয়তো তিনিই যা করেছেন ঠিকই করেছেন।


 সমাপ্ত


লেখকঃআরাফাত হোসেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন